স্টাফ রিপোর্টার ঃ রাজবাড়ীর পাংশা থানার একটি চাঞ্চল্যকর অস্ত্র মামলার পলাতক আসামী হেনা মুন্সী। আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার দীর্ঘ ১০ বছরের ওই ওয়ারেন্ট তামিল হয়নি। অথচ রাজবাড়ী,পাংশা এমনকি রাজধানী ঢাকায় প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে তার দেখা মিলছে। এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, পাংশার হাবাসপুর ইউনিয়নের কাঁচারীপাড়া এলাকার প্রয়াত নাদের মুন্সীর ছেলে হেনা মুন্সী। ২০১১ সালের ১৬ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে হাবাসপুর চরপাড়া মোড় বাজার এলাকায় অবস্থানকালে হেনা মুন্সী, লতিফ প্রামানিক ওরফে ধলাই সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন আগ্নেয়াস্ত্রসহ জনৈক উকিল মন্ডল (২৭) নামে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মারপিটে উকিল মন্ডলের সামনের উপর পাটির একটি দাঁত ভাঙ্গিয়া যায়। এসময় স্থানীয় জনগণ ধাওয়া করিয়া লতিফ প্রামানিক ওরফে ধলাইকে ১৬ ইঞ্চি লম্বা একটি ওয়ান সুটার গান সহ আটক করে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় মোঃ উকিল মন্ডল নিজে বাদী হয়ে পাংশা থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় একটি মামলা (নং-১৬,জিআর-২২১/১১ তারিখ-১৬/০৮/২০১১) দায়ের করে। ধৃত আসামী লতিফ প্রামানিক ২০১১ সালের ১৭ আগস্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। ওই জবানবন্দীতে হেনা মুন্সীর সক্রিয় সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাংশা থানার তৎকালীন এস.আই জাফর আলী খান তদন্ত শেষে লতিফ প্রামানিক ওরফে ধলাই, হেনা মুন্সী ও মোঃ মঞ্জুকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে। রাজবাড়ীর বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ১০/১০/২০১৭ ইং তারিখে এ মামলায় শুরু থেকে পলাতক থাকা হেনা মুন্সী সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটি বিচারের জন্য যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে প্রেরিত হয়।
মামলায় অভিযুক্ত ২ নং আসামী হেনা মুন্সী শুরু থেকেই অনুপস্থিত। এছাড়া চার্জশীটের ৩ নং আসামী মোঃ মঞ্জু আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১২/০৪/২০১৫ তারিখে তার জামিন বাতিল হয় এবং ১ নং আসামী লতিফ প্রামানিক ওরফে ধলাই আদালতে গড় হাজির থাকায় ১৯/০৫/২০১৯ তারিখে তার রজামিন বাতিল হয়। বর্তমানে অত্র মামলায় অভিযুক্ত ৩ আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী রয়েছে। বিজ্ঞ আদালত সর্বশেষ গত ২৩/০৯/২০২০ ইং তারিখে পুনরায় স্বাক্ষীর দিন ধার্য্য করিয়া ১-৪ নং স্বাক্ষীর প্রতি এনবিডাব্লু ইস্যুর আদেশ প্রদান করেন। আগামী ৫ জানুয়ারী মামলার স্বাক্ষীর দিন ধার্য রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মামলায় অভিযুক্ত পলাতক আসামী হেনা মুন্সী সহ অন্যরা এলাকায় অবস্থান করে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজী কর্মকান্ড অব্যাহত রাখায় জনমনে ভীতি সৃষ্টি সহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্নক অবনতির আশংকা রয়েছে। এদিকে মামলার পলাতক ও চার্জশীটভূক্ত ২ নং আসামী হেনা মুন্সীর বিরুদ্ধে পাংশা থানায় বাংলাদেশ দন্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৩৮৬/৩৭৯/৪২৭/৫০৬(২) ধারায় একটি মামলা (থানার মামলা নং-১ যাহা জিআর-১২২ তারিখ-৩/১০/২০২০) দায়ের হয়েছে। পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদের ছোট ভাই মোঃ ইদ্রিস আলী মন্ডল বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পরও সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনে তার দেখা মিলছে। এদিকে গত ১৯ অক্টোবর রাজবাড়ীর যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত থেকে ওই মামলায় হেনা মুন্সী সহ অভিযুক্ত ৩ আসামীর বিরুদ্ধে নতুন করে ডুপ্লিকেট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।
পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডাঃ এ এফ এম শফিউদ্দিন পাতা বলেন, একটি অস্ত্র মামলায় ১০ বছর ধরে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট পেইন্ডিং রয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে একটি চাঁদাবাজী মামলায় সে পলাতক রয়েছে। তারপরও প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা ও বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ এর ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক।