মাসুদ রেজা শিশির ঃ রাজবাড়ীর পাংশা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপজেলার সর্বউচ্চ বিদ্যাপীঠ পাংশা সরকারি কলেজ। পাংশা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতি ও কলেজের বিপুল পরিমান অর্থ আত্বসাতের অভিযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এরই মধ্যে পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরীকে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বদলী করা হয়েছে। ১৪ জানুয়ারী’২১ মাউসি এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বদলীর আদেশ দিয়েছেন। এদিকে এখর পাংশা সরকারী কলেজে এলাকায় পৌছালে শিক্ষকদের মধ্যে শস্তির আমেজ দেখা গিয়েছে,তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন শুধু বদলীই হলেই শেষ নয় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন পাংশা সরকারী কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ঠরা। পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৪ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেন কলেজের একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র। তদন্ত কমিটির চিটিতে বলা হয়েছে। দূর্নীতি দমন কমিশন এর স্বারক নং-০০.০১.০০০০০.৫০৩.২৬ (১ম অংশ).০৮৯.২০-১৬৮৪৫ এর আলোকে পাংশা পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু.আতাউল হক খাঁন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কলেজের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম, দূর্নীতি বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর’র উপ-পরিচালক (এইচআরএম) প্রফেসর মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন,সহকারী পরিচালক এরফানুল হক শোয়েব, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ক্রয়) তানভীর মোশারফ’র সমন্নয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে পাংশা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কলেজের সকল শিক্ষকগন দূর্নীতির বিরুদ্ধে সৌচ্চার হয়ে উঠেছেন। পাংশা সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ.কে এম শরিফুল মোর্শেদ রঞ্জু স্বাক্ষরিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত ভাবে আবেদন করে অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরীর দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে কলেজ অধ্যক্ষ দূর্নীতি,আর্থিক অব্যবস্থাপনা, শিক্ষকদের সাথে অ-সৌজন্য মূলক আচরন এবং স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থি কার্যাকালাপে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের হয়রানী ও জিম্মি করে অর্থ কামাই করায় তার নেশা হয়ে উঠেছে বলে শিক্ষক পরিষদের এক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকগন। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর মঙ্গলবার পাংশা সরকারি কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষক পরিষদের এক সভায় অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা তুলে ধরেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ.কে এম শরিফুল মোর্শেধ রঞ্জু। শিক্ষক নেতা রঞ্জু অভিযোগ করেন শিক্ষকদের জাতীয় করণের নামে ঘুষ হিসাবে ৯ লক্ষ টাকা এবং বেতন করানোর নামে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। বাজেট প্রণয়নের নামে ভ’য়া কমিটি করে তিনি প্রায় ৯লক্ষ টাকা বন্ঠন করে নিয়েছেন। অনলাইন ফিসের নামে পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি ভাবে ২০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি রশিদের মাধ্যমে ২০০ টাকা করে নিয়ে তা নিজে আত্বসাধ করেছেন। তিনি সরকারী বাসভবনে বসবাস করেও সরকারী ভাবে বাড়ী ভাড়া উত্তোলন করে আসছেন। তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে এসি যুক্ত আধুনিক আসবাব সজ্জিত বাসায় বসবাস করেন। বিভিন্ন কমিটি গঠন করে অনৈকভাবে নিজে আহবায়ক হন এবং সম্মানী হিসাবে বড় অংক বরাদ্ধ নেন। কলেজে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ^াসী শিক্ষকদের হেনস্তা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে, এমনকি মুজিববর্ষ ও ১৫ আগষ্ঠ জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানেও দেখাযায়নি ওই অধ্যক্ষকে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকগন। এছাড়াও পৌর কর নিয়ে পৌরসভার সাথে চলা বিষয়টি সকল শিক্ষকদের মধ্যে নানা গুনজন ছড়িয়ে পড়েছে এছাড়াও তিনি নিয়মিত কলেজে থাকেন না এটা কমন একটি অভিযোগ বলে জানিয়েছেন ওই কলেজের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। কলেজ সরকারী হওয়ার পর থেকে অদ্যবদি শিক্ষকদের এসিআর প্রদান করেননি অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী। তিনি শিক্ষকদের এসিআর আটকে রেখে জিম্মি করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন সময় ভূয়া বিলভাউচার করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নেওযায় ছিল তার অন্যতম কাজ বলে মনে করছেন কলেজের শিক্ষকগন। পাংশা সরকারী কলেজের প্রভাষক মোঃ কুতুব উদ্দিন বলেন-আমাকে দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিল ভাইচারে সই করিয়ে নিয়েছে এবং নিজে সেই সব টাকা আত্বসাধ করেছেন। শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ.কে এম শরিফুল মোর্শেদ রঞ্জু বলেন শিক্ষকদের প্রতি বছর এসিআর দেওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষ নিজের স্বার্থে শিক্ষকদের ব্যবহার করার জন্য এসিআরের ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের হয়রানী করে আসছিল অদ্যবদি তিনি শিক্ষকদের এসিআর প্রদান করেননি। প্রভাষক শামীমা আক্তার মিনু বলেছিলেন (এখন তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) আমার চাকুরী যাতে না হয় এ জন্য তিনি নানা অত্যাচার আমার সাথে করেছে, আমি ওই অধ্যক্ষকে পা ধরেও কোন প্রতিকার পায়নি। আমার সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি অভিযোগ তুলেও কোন ফায়দা না পেয়ে মোটা অংকের অর্থ দাবী করে আমাকে হয়রানী করেছে অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী। প্রভাষক শিব শংকর চক্রবর্তী বলেন অধ্যক্ষ প্রত্যেক শিক্ষকের সাথে অসভন আচরণ করেন পিতা মাতা তুলে গালিগালাজ করেন, কারনে অকারনে তিনি শিক্ষকদের শোকজ করে ভয় দেখিয়ে তার বিপক্ষে কথা বলা থেকে বিরত রাখতে ব্যাস্ত ছিলেন সব সময়। প্রভাষক তৌবুর রহমান বলেন নিজে এখনও কলেজ ক্যাম্পাসে সরকারী বাসভবনে স্ত্রী পরিজন নিয়ে বসবাস করেন অথচ তিনি সরকারের নিকট থেকে বাড়ী ভাড়া নিয়ে আসছেন শুরু থেকেই। একজন অধ্যক্ষ তার নিতিরিতি এই হলে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তার থেকে কি পাবে। প্রভাষক মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বিভিন্ন সময় সেই সাথে করেছেন খারাপ আচরন আমাদের নায্য টাকা দাবী করায় নানা ভাবে হয়রানি করে আসছেন অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী। কলেজ ক্যাম্পাসে গুনজন রয়েছে নিজের দোষ আড়াল করতে তরিঘড়ি করে তিনি পাংশা থেকে আত্বগোপন করেছেন নাম মাত্র একজন জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান করেছেন, তবে এ দায়িত্ব প্রদান নিয়েও রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে নানা গুনজন। নিয়োমের তোয়াক্কা না করে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে এ দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে রয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ! তদন্ত সংশিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত থাকায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এ সকল বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরীর সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করা হলে তার মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া যায় তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডি ম্যাসেন্জারে এ বিষয় নিয়ে বক্তব্য চাইলেও কোন সাড়া মেলেনি।