মাসুদ রেজা শিশির ঃ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় পাংশা সরকারী কলেজ প্রাঙ্গনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থাকলেও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি ভাষা শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদ মিনার। আর পাংশা উপজেলায় ১২১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭টি বিদ্যালয়ে রয়েছে শহীদ মিনার। সিংহভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। অবশ্য এ জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় শিক্ষকগণ। বলা হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণ করার সময় প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার তৈরী করে দিলে এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতাম। কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মান করা হয় অথচ একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়না, এটা অত্যান্ত দুঃখ জনক বলে মনে করেন বিশিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোঃ চাঁদ আলী।
পাংশা উপজেলায় ২৬ টি মাদ্রাসা রয়েছে এই ২৬টি মাদ্রাসার একটিতেও নেই শহীদ মিনার। শহীদ দিবসে নাম মাত্র দোয়ার মধ্যদিয়ে তারা শহীদ দিবস পালন করে থাকেন। কমলমতি শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের ইতিহাস কি করে জানবে প্রশ্ন করেছেন এক সচেতন অভিভাবক। তিনি বলেন ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির শুরু সেই সঠিক ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই সঠিক ভাবে জানতে হবে। পাংশা উপজেলায় ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছেন তার মধ্যে ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। দুঃখ জনক হলেও সত্য পাংশা উপজেলার এক মাত্র সরকারী বিদ্যালয় পাংশা জর্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়েও নেই শহীদ মিনার। ২০ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মান হয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ইচ্ছায়। বাকি বিদ্যালয় গুলোতেই যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাষা শহীদদের স্বরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এমন দাবী তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। পাংশা উপজেলায় ৯ টি কলেজ রয়েছে এ ৯টি কলেজের মধ্যে পাংশা সরকারী কলেজ,বঙ্গবন্ধু কলেজ শরিসা,মাছপাড়া কলেজ, কলিমহর মহা বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে বাকি কলেজ গুলোতে এখনও শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে উদাসীনতার বিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর মু. জাহিদুল কবির তুহিন বলেন,যে দপ্তর স্কুলগুলো ভবন নির্মাণ করেন তারাই প্রতিটিতে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারে। তারপরও অনেক প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে শহীদ মিনার। স্কুল ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুল গুলোর উন্নয়ন মূলক কাজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের চাহিদার ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বা স্কুল কর্তৃপক্ষের চাহিদা থাকলে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের শহীদ মিনার নির্মাণ করার সুযোগ রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সাংসদ সদস্য আব্দুল মতিন মিয়া বলেন, এখন অনেকটা গা ছাড়া ভাবেই চলছে সবই। নতুন প্রজন্মের মনে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের আবেগ তৈরি করতে না পারাটা আমাদেরই ব্যার্থতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার শিক্ষার্থীদের ভাষার গুরুত্ব বোঝাতে সহায়ক হয়। যারা রাজনীতির ধারক বাহক শহীদ মিনার নির্মাণে তাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম নাসিম আখতার বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষকদের এ ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে থাকি সেই সাথে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের তথ্য’র তালিকায় কোন প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে বা নাই তার তালিকাও প্রেরণ করে থাকি।
এ ব্যাপারে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ আলী বলেন, যে প্রতিষ্ঠান সমূহে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি তাদের কে দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে যেহেতু রাষ্ট্রিয় বিষয় রয়েছে আমরা চেষ্টা করব সকল প্রতিষ্ঠানে যাতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।