আজু শিকদার : ২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ প্রতিরোধ ও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনী পদ্মাপারের গোয়ালন্দ ঘাট আক্রমন করে
নিরস্ত্র মানুষের উপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
মুক্তিযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ দিন কাকডাকা
ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি করে হানাদার বাহিনী
এসে নামে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গি এলাকায়।
সেখানে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল
হালকা অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু
পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ
ভেঙ্গে পড়ে।
এসময় শত্রæবাহিনীর বুলেটে শহীদ হন আনছার কমান্ডার মহিউদ্দিন ফকির। এরপর
পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ব্যাপক
গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে
হানাদারের বুলেটে শহীদ হন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনতাকামী জিন্দার
আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী
মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবুরু বেগম, মোলায়েম সরদার, বুরুজান
বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল,
খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, মোকসেদ আলী শেখ,
নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলাবুরু বেগম, আলেয়া খাতুন, বাহেজ পাগলাসহ নাম
না জানা আরো অনেকে। সেই থেকে এই দিনটিকে গোয়ালন্দ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে
বিবেচনা করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারন মানুষ।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর আব্দুস সামাদ মোল্লা বলেন, ২১ শে
এপ্রিল ছিল বুধবার। ভোরে পাকহানাদার বাহিনী গোয়ালন্দ আক্রমন ও নিরস্ত্র
মানুষের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে। আমাদের
হালকা অস্ত্রের প্রতিরোধ বেশীক্ষন স্থায়ী না হলেও মূলত ওই দিনই আমাদের
সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।
রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার
জানান, ২১ এপ্রিল প্রতিরোধ যুদ্ধে আমার সরাসরি অংশগ্রহরেনর সৌভাগ্য
হয়েছিল। প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানটি স্মরনীয় করে রাখতে সেখানে ইতিমধ্যে
জেলা পরিষদের অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু
করা হয়েছে।