স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ীতে নদ-নদী, খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরতে বেশ কিছুদিন ধরে ‘চায়না দোয়ারী’ বা ঘন বুননের এক ধরনের কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন জেলে ও স্থানীয়রা। এ জালে ধরা পড়ছে ছোট-বড় মাছ ও পোনা মাছ। এমনকি মাছের ডিমও উঠে আসছে এ জালে। চায়না দোয়ারীর কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার মৎস্য সম্পদ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না। মুক্ত জলাশয়গুলো হয়ে পড়বে দেশী মাছ শূন্য।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়নের হাট-বাজারে প্রকাশ্যে নির্দিষ্ট দোকানে এসকল চায়না দোয়ারী ও কারেন্ট জাল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে চায়না দোয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ ও অভিযুক্তদের জরিমানা করা হয়। তবে এসব অভিযানে থামেনি মৎস্য শিকারীদের দৌরাত্ম্য।
নদীপাড়ের বাসিন্দা ও জেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ফুট লম্বা একেকটি চায়না দোয়ারীর দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। অতি সূক্ষ ও ঘণ এ জালের বৈশিষ্ট্য হলো নদ-নদী, বিল-বাওর বা অন্যান্য জলাশয়ে মাটির সঙ্গে লম্বা-লম্বিভাবে লেগে থাকে এবং দুই দিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে।
তারা আরও জানান, চীনের এ জালে মাছ ধরতে কোনো খাবার বা টোপ দিতে হয় না। সহজে মাছ ধরা পড়ে বলে আয় বেশি, পরিশ্রমও কম। নদীর মিঠা পানির সব ধরনের মাছ সূক্ষ এ জালে ধরা পড়ে। নদীতে পানি বেশি থাকলেও ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কই, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছই ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে ‘স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সহযোগিতায় নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়ারী’র বিরুদ্ধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, মোবাইল কোর্ট ও অভিযান করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযান টের পেলে দোকান বন্ধ অথবা জরিমানা দিয়ে পুনরায় আবার বিক্রি করে আসছে।
সম্প্রতি মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে জেলার ৫টি উপজেলাতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান চায়না দুয়ারী ও কারেন্টজাল উদ্ধার করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, অবৈধ ‘চায়না দোয়ারী’ খাল-বিল ও নদী নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়ের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকি স্বরূপ। জেলার সর্বত্র মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার স্থাপন, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, মোবাইল কোর্ট ও অভিযান করা হয়েছে। চায়না দোয়ারী দিয়ে মাছ শিকার একটা বেআইনি কাজ। এর বিরুদ্ধে জেলাব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। কোনোভাবেই নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়ারী’ দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়া হবে না।