সোহেল রানা : রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্ধা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হারুনার রশিদ খানসহ ২জনের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করাসহ সরকারী ১৩৫ মে.টন চাল আত্নসাতের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
ফরিদপুর সিনিয়র বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ১০ আগস্ট মামলাটি দায়ের করেছেন ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গার সাবেক ওসি এলএসডি (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রুহুল আমিন মিয়া। মামলায় আসামী করা হয়েছে, রাজবাড়ী জেলা শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত আঃ লতিফ খানের ছেলে বর্তমান ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সাবেক আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ হারুনার রশিদ খান ও ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও বর্তমান বাগেরহাটের মোল্যারহাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া থানার শ্রীরামকান্দি গ্রামের শেখ আবুল হোসেনের ছেলে শেখ জিকরুল আলম।
মামলার এজাহার সুত্রে জানাগেছে, ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ২৫ মে পর্যন্ত আলফাডাঙ্গা এলএসডি (খাদ্য গুদাম) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকায় সাবেক আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ হারুনার রশিদ খান ও ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শেখ জিকরুল আলম পরস্পর যোগসাজসে গোডাউনে ভি-ইনভেয়েসের মাধ্যমে আসা চাল রেজিষ্ট্রারে এন্ট্রি না করার জন্য নির্দেশ দেন। তারা যখন আসবেন তখন এন্ট্রি করবেন বলে নির্দেশ দেন। আর বেশি বাড়াবাড়ি করঠে চাকুরীচ্যুতির হুমকি দেন। তাদের নির্দেশনায় গুদামে আসা ভি-ইনভয়েস (৭টি) চালের ১৩৫ মে.টন চাল গোডাউনে মজুদ রাখা হয়। ওই চাল ২জন উপস্থিত থেকে ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। এতে সরকারের ৫৩ লক্ষ ২৪ হাজার ৭৯৯ টাকা রাজস্ব ক্ষতি উল্লেখে বাদীকে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণের জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়। টাকা না নেওয়ায় তারা মামলার বাদীকে চাকুরীচ্যুতির হুমকি দেয়। হারুনার রশিদ ২০১৬ সালে ফরিদপুরের মধুখালী এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্যবান্ধব খাতের ৩০০ মে.টন চাল বিক্রি করে আত্নসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২ জনই দুর্ণীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং শশুর-শাশুরীর নামে গচ্ছিত করেছেন। অপরাধের অর্থ দিয়ে হারুনার রশিদ রাজবাড়ী শহরের বেড়াডাঙ্গা এলাকায় একটি ৫তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ২ ছেলে ইউরোপে লেখাপড়া করেন ও এক মেয়ে বেসরকারী মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেন। শেখ জিকরুল আলম কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে নামে-বেনামে এবং গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ায় একটি ৫তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। আলফাডাঙ্গা খাদ্য গুদামে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ, ২৩ মার্চ, ১৭ এপ্রিল ৭টি ভি-ইনভয়েসের চাল সমন্বয় করতে না দিয়ে কয়েকদিন যাবৎ ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করে ভাগাভাগি করে নেন। বাদীকে জোড়পুর্বক ও মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে রেজিষ্ট্রারে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন।
মামলার বাদী মোঃ রুহুল আমিন মিয়া বলেন, বিষয়টি আলফাডাঙ্গা থানায় ও দুর্ণীতি দমন কমিশনে মামলা দায়েরের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। মামলাটি দুর্ণীতি দমন কমিশন তদন্ত করছেন। আমি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। তবে তার ও নৈশ প্রহরী নজরুলের বিরুদ্ধে দুদক চার্জশীর্ট দাখিল করেছেন বলেও স্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত হারুনার রশিদ খান বলেন, খাদ্য গুদামের ৭ ট্রাক চাল বিক্রি করায় আলফাডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করার পর দুদক তদন্ত করে চার্জশীর্ট দাখিল করেছেন। আমাদের স্বাক্ষর জাল করার প্রমান মিলেছে তদন্তে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে পলাতক আছে।
অভিযুক্ত শেখ জিকরুল আলম বলেন, এ মামলার বিষয়ে আমি অবগত নয়। তবে রুহুল আমিন মিয়া ও নজরুল ইসলামকে আসামী করে দুদক একটি চার্জশীট দাখিল করেছেন আদালতে।
উল্লেখ্য ইতোপূর্বে চাল আত্নসাতের ঘটনায় হারুনার রশিদ খান বাদী হয়ে রুহুল আমিন মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ফরিদপুর দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত সম্পন্ন করে ২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীর্ট দাখিল করেছেন।