কাজী আনোয়ারুল ইসলাম টুটুল : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা সব ষড়যন্ত্র ও বাধাকে মোকাবেলা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
তিনি বলেন, ‘আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র হবে কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে। সেটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাল্লাহ আমরা পূরণ করব।’
নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগে নতুন আইন প্রণয়নসহ তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি আবারও আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের আশ্বাস দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের কোনো আর্থিক সক্ষমতা ছিল না। সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাছে রাখা ছিল, যেটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্বাচন কমিশনের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সারাসরি তাদের টাকা দেয়া হয়। যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং বেশ কিছু স্থানে ইভিএম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইভিএম করার পরে আর কোন ভোট জালিয়াতি করার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ আমরা ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন-২০২২ পাস করেছি। আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকতো তাহলে আমরা এই আইন কেন করলাম? খালেদা জিয়ার মত ঐ আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতে পারতাম। তাতো আমরা করি নাই। কারণ, আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা কাউন্সিল স্থলে এলে দলের সিনিয়র নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।’ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অভ্যর্থনা কমিটির আহবায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
উদ্বোধনকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি সকল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্বোধনকালে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়ানো হয়। এর পর পরই কাউন্সিলের থিম সং পরিবেশন করা হয়।
এর আগে কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের শুভেচ্ছা জানান।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে নামাজ ও মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য বিরতি দেয়া হয়। পরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি ও ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়।
আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে কোন বিদেশি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায়নি, তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এছাড়া দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি দূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক দলে শেখ হাসিনা নয় বার সভাপতি ছিলেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চার বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পাঁচবার, তাজউদ্দিন আহমেদ চার বার এবং জিল্লুর রহমান ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এ পর্যন্ত দলটির ২১টি জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পুন:নির্বাচিত হন।