• সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কালুখালীতে প্রাথমিক পর্যায়ের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের বনভোজন পাংশায় ৩২ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৫ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস দৌলতদিয়ায় ৪৪ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার দৌলতদিয়ায় বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা রাজনৈতিক দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে মহাসড়কের নিরাপত্তায় সতর্ক আহলাদীপুর হাইওয়ে থানা বালিয়াকান্দিতে নতুন কার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু পাংশায় দস্যুতা মামলায় লুন্ঠিত মোবাইলসহ ২ জন গ্রেপ্তার বালিয়াকান্দিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীর গলায় ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যা রাজবাড়ীতে ৩ টি চোরাই গরু নিলামে বিক্রির আদালতের নির্দেশ রাজবাড়ীতে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত

রাজবাড়ীতে ২০ সিনেমা হল : ৩টি হলের দর্শক থাকলে চলে-না থাকলে বন্ধ

প্রতিবেদকঃ / ১০৭ পোস্ট সময়
সর্বশেষ আপডেট বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : গ্রাম থেকে শহর একসময় সব জায়গায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। বিনোদন বলতে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন মিলে সিনেমা দেখা। টিকিট সংগ্রহ করার মধ্যেও ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। সহজে টিকিট পাওয়া মানে ছিল সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। কখনো কখনো ব্ল্যাকে উচ্চ মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু এসব চিত্র এখন কেবলই স্মৃতি! দর্শক সংকটের কারণে সারা দেশের মতো রাজবাড়ীর সিনেমা হলের সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোঠায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ২০টি সিনেমা হল ছিল। দর্শক সংকটে অধিকাংশ হল বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র ৩টি হল কচ্ছপের গতিতে চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সেই হলগুলোও চলে দর্শকদের উপর নির্ভর করে। দর্শক থাকলে চলে, না থাকলে বন্ধ থাকে।
এসব সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলায় ৬টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৬টি, পাংশা উপজেলায় ৪টি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩টি এবং কালুখালী উপজেলায় ১টি সহ মোট ২০টি সিনেমা হল ছিল। এই ২০টি সিনেমা হলের মধ্যে মাত্র ৩টি হল সচল রয়েছে।
তাও সেসব চলছে কচ্ছপ গতিতে। বাকি ১৭টি সিনেমা হলের ভবন ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে বিপণি বিতান, গ্যারেজ, গোডাউন ও আবাসিক ভবন। জেলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল ‘বসুন্ধরা’ মালিক পক্ষ বিক্রি করে দিয়েছেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় অবস্থিত সাধনা সিনেমা হল, কালুখালী উপজেলায় বৈশাখী এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে মনোরমা সহ মোট তিনটি সিনেমা হল এখন সচল রয়েছে। এসব সিনেমা হল ঘুরে দেখা যায়, শো চলার নির্ধারিত কোনো সময় নেই। দর্শকদের চাহিদার উপর নির্ভর করে মাঝে মধ্যে একটি-দুটি শো চালানো হয়; মাসের বেশি ভাগ সময়ই এসব হল বন্ধ থাকে। দর্শক সংকটের কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বাকি তিনটি হল!
সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, মানহীন সিনেমা ও বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনকে।
তারা বলেন, নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা হলগুলোতে উপচেপড়া ভীড় থাকতো। ২০০০ সালের পর থেকে হল বিমুখ হতে শুরু করেন স্থানীয় দর্শকরা। তাদের ধারণা, পরিবারের সবাই মিলে দেখার মতো মানসম্মত ও শিক্ষণীয় সিনেমা তৈরি হলে দর্শকরা আবারো হলমুখী হবেন।
মনোরমা সিনেমা হলের মালিক তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘রাজবাড়ীতে অনেক সিনেমা হল ছিল। সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল ছিল আমাদের। কিন্তু লোকসান গুনতে গুনতে একসময় সিনেমা হলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এখন মাত্র একটি সিনেমা হল আছে; সেটিও যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ‘সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে মানসম্মত সিনেমা না থাকা, হলগুলো উন্নত না হওয়া, স্মার্ট ফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন বিষয় এর জন্য দায়ী। তবে সরকার আন্তরিক হলে মালিকরা পুনরায় সিনেমা হলগুলো চালু করতে পারেন।’
মনোরমা সিনেমা হলের কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘একসময় সিনেমা হলে উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হলগুলোতে মানুষের উপস্থিতি থাকতো। তখন প্রতিদিন ৪টি করে শো চালানো হতো। প্রতিটি শোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি দর্শক থাকতো। পরবর্তী শোয়ের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হতো। কিন্তু এখন দর্শক সংকটে হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলোর শ্রমিকরা অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।’
বন্ধ হয়ে যাওয়া মধুমতি সিনেমা হলের মালিক বলেন, ‘দর্শক না হওয়ায় ১২-১৩ বছর পূর্বে আমাদের সিনেমা হলটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। একসময় সিনেমা হলের ব্যবসা খুব ভালো ছিল। ৪টি শোয়ে মানুষের ভিড় থাকতো। এখন আর কেউ বিনোদন নিতে সিনেমা হলে আসেন না।’
গোধূলী সিনেমা হলের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন মনে করেন, অনেক আগেই সিনেমা হলের ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু কাগজে-কলমে এই ব্যবসা রয়েছে। তার ভাষায় ‘একটা সময় ছিল, যখন মুক্তির পূর্বে নতুন সিনেমা বুক করতে হতো। এখন নতুন-পুরান কোনো সিনেমাই দর্শক দেখেন না।’ কারণ হিসেবে আলমগীর হোসেন দায়ী করেন মুঠো ফোনকে। যখন যা ইচ্ছে তাই এই ডিভাইসে দেখতে পাচ্ছেন মানুষ। প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘তাহলে কেন সময় নষ্ট করে বস্তাপচা বিনোদন নিতে হলে আসবেন দর্শক?’।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ