• শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উজানচর জামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা রাজবাড়ীতে বিএনপি’র রোড মার্চ সফল করতে ছাত্রদলের ঘোষণা রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালিত রাজবাড়ী মাটিপাড়া হোণ্ডাকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন দৌলতদিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে মিছিল আ.লীগ নেতা টিপুর উদ্যোগে কালুখালীতে প্রধানমন্ত্রী’র জন্মদিন পালিত দৌলতদিয়া থেকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ ২জন গ্রেপ্তার কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা রাজবাড়ীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত

কালুখালীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে তৈরি হচ্ছে ২০টি মডেল ঘর

প্রতিবেদকঃ / ৬৮ পোস্ট সময়
সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

রুবেলুর রহমান : মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ উৎপাদনে বিখ্যাত জেলা রাজবাড়ী। সারাদেশের প্রায় ১৫-১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। উৎপাদনে দেশের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজবাড়ী। জেলার ৫ উপজেলায় কম বেশি পেঁয়াজের আবাদ হলেও কালুখালীতে উল্লেখযোগ্য হারে আবাদ হয়।
জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ কৃষক ভরা মৌসুমেই তা কম দামে বিক্রি করে দেয়। আর অল্প কিছু সংখ্যক কৃষক নিজস্ব উপায়ে সংরক্ষণ করলেও থাকেন নানা জটিলতায়। এ ধরাবাহিকতায় এবার পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলায় পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বিনামূল্যে ২০টি মডেল ঘর বিনামূল্যে নির্মাণ করে দিচ্ছেন। ঘরগুলো কংক্রিটের পিলারের ওপর ২৫ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট চওড়া বাঁশ-কাঠের মাধ্যমে ৩ স্থরের মাচালি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। যার প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘরে ৫জন কৃষক যৌথভাবে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিল প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ৩শ মন পেঁয়াজ ৬-৯ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ করছেন মোল্লা এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
কালুখালীতে প্রায় ১৮ হাজার চাষী পেঁয়াজ চাষের সাথে জড়িত। এবছর উপজেলায় ৮ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৯৩ হাজার ৮১৭ মেট্রিকটন পেঁয়াজ।
এদিকে, এ পাইলট প্রকল্পে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য উপজেলার মৃগী ইউনিয়নে ৪টি, বোয়ালিয়ায় ৪টি, রতনদিয়ায় ৩টি, মাজবাড়ীতে ৩, সাওরাইলে ৩টি ও মদাপুরে ২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জানুয়ারীতে শুরু হয়েছে। শেষ হবে জুন মাসে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে কৃষকদের কাছে ঘর গুলো হস্তান্তর করা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, এবছর জেলায় ৩৪ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উন্মুক্ত স্থানে কৃষকের বাড়ীর আঙ্গিনায় কংক্রিটের পিলারের ওপর বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঘর। রঙিন টিন দিয়ে দেয়া হচ্ছে ছাউনি। এছাড়া ঘরে দেওয়া হয়েছে ৩ স্তরের মাচালি। সার্বক্ষনিক আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ঘরের চারপাশের বেড়া ও দরজা দেওয়া হয়েছে বাঁশ দিয়ে।
আরিফুল ইসলাম, ফারুক সহ কয়েকজন বলেন, কালুখালী, পাংশা ও বালিয়াকান্দিতে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু যথাযথ ভাবে সংরক্ষণের অভাবে সিজনের শুরুতেই অল্প দামে বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েন। এখন সরকার যে ঘর দিচ্ছে, তা মাত্র কয়েকজন কৃষক পেয়েছেন। কৃষকদের লাভবান করতে প্রতিটি এলাকায় এরকম ঘর করা উচিত। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে তারা লাভবান হবেন।
পেঁয়াজ চাষী পরশ আলী খান বলেন, সরকারী ভাবে পেঁয়াজ রাখার একটি ঘর তার বাড়ীতে করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ ঘরে ৫জন কৃষক মিলে ৩শ মন পেঁয়াজ রাখতে পারবেন। কিন্তু তিনি এবার ৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে প্রায় ৩-৪শ মন পেঁয়াজ পেয়েছেন। তাহলে অন্যের পেঁয়াজ তিনি কোথায় রাখবেন। আগে নিজস্ব উপায়ে সংরক্ষণ করলেও পচে যেতো। যার কারণে দ্রুত কম দামে বিক্রি করে দিতেন। এখন এ ঘরে দীর্ঘ দিন পেঁয়াজ রাখতে পারবেন। এতে তিনি খুশি। ফলে এই রকম ঘর প্রতিটি কৃষকের বাড়ীতে সরকারের করে দেওয়া উচিত।
আরেক চাষী রফিক বলেন, তিনি গরিব মানুষ, পেঁয়াজ মুজদ করে রাখার মত কোন অবস্থা নাই। ফলে সংরক্ষণের অভাবে সিজনের সময় কমদামে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু যারা ঘরে মাচা বা চাঙে সংরক্ষণ করে রেখেছেন, তারা এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। সরকার থেকে পেঁয়াজ রাখার জন্য ঘর দিচ্ছে, কিন্ত তিনি সেটি জানেন না। ঘর পানও নাই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে তিনিও পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রেখে বেশি দামের সময় বিক্রি করে লাভবান হতে পারতেন।
পেঁয়াজের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বলেন, কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে সংরক্ষণ করতে না পেরে ৭-৮শ টাকা মনে বিক্রি করে দেয়। আর যারা ঘরে রাখে তারা পরে বেশি দামে বিক্রি করে। তারাও নিয়মিত কেনেন এবং বিক্রি করেন। তাদের মজুদ করার জায়গা থাকলে লাভবান হতেন।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কমকর্তা মোঃ রাজিব খান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কালুখালীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে বিনামুল্যে ২০টি ঘর নির্মাণ হচ্ছে। প্রতিটি ঘরে ৫ জন কৃষক যৌথভাবে ৩শ মন পেঁয়াজ রাখতে পারবেন। এ ঘরে ৬-৯ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ রাখা যাবে। এর ফলে কৃষকরা লাভবান হবেন। সারা বছরের পেঁয়াজের ঘাটতিও পুরণ হবে। পর্যাক্রমে অন্যান্য উপজেলাতেউ এমন ঘর নির্মাণ করা হবে।
কালুখালী উপজেলা কৃষি অফিসার পূর্ণিমা হালদার বলেন, কালুখালী পেঁয়াজ আবাদের উপযুক্ত এলাকা। এবছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। বিগত দিন গুলোতে কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদনের পর নিজস্ব উপায়ে সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু এবার পাইলট প্রকল্পে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২০টি ঘর নির্মাণ করছে। এ ঘরে পেঁয়াজ রাখার যে সুবিধা কৃষকরা যদি সেটি পায়, তাহলে পরবর্তীতে এ ঘরের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। আর এ পদ্ধতিতে বেশি দিন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে হয়তো বড় বড় কৃষকরা নিজস্ব খরচে এ ধরনের ঘর নির্মাণ করবে। এতে পের্ঁয়াজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। সঠিক দামও পাবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Sorry buddy! You can\'t copy our content :) Content is protected !!