• শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উজানচর জামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা রাজবাড়ীতে বিএনপি’র রোড মার্চ সফল করতে ছাত্রদলের ঘোষণা রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালিত রাজবাড়ী মাটিপাড়া হোণ্ডাকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন দৌলতদিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে মিছিল আ.লীগ নেতা টিপুর উদ্যোগে কালুখালীতে প্রধানমন্ত্রী’র জন্মদিন পালিত দৌলতদিয়া থেকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ ২জন গ্রেপ্তার কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা রাজবাড়ীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত

গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে বহুবিধ অনিয়ম-দুর্ণীতির অভিযোগ

প্রতিবেদকঃ / ৬৮ পোস্ট সময়
সর্বশেষ আপডেট শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

সোহেল রানা : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, হাটবাজার ইজারায় অনিয়ম, শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ভূঁয়া ভাউচার দিয়ে বিপুল পরিমাণ বিল উত্তোলন, শহরে লাইট সোলার স্থাপন, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আপ্যায়ন বিল উত্তোলন সহ বহুবিধ অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পৌরসভার বাসিন্দা মোঃ শহিদ শেখ ও চাকুরী প্রত্যাশীরা। অভিযোগে কোন ফল না মেলায় অভিযোগকারী মোঃ শহিদ শেখ মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত আগামী ৩ মাসের মধ্যে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) কে তদন্তপূর্বক নিষ্পত্তি করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডল পায়াক্ট নামে সামান্য এক এনজিও কর্মী হিসেবে জীবন শুরু করলেও গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপারে দালালী ও দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে কোটি টাকার মালিক বনে যান। এরপর ২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন নিয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা প্রতিক পেয়েও তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৯ সালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম মোল্লা ওরফে আবু ডাঃ খুন হয়। ওই হত্যা মামলার আসামী হিসেবে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন নজরুল মন্ডল। নজরুল মন্ডল কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সুকৌশলে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় নজরুল মন্ডলের স্ত্রী কাকলী নজরুলকে। আর সহ-সভাপতি হন নজরুল মন্ডল নিজে। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে ২০২০ সালের ৮ আগস্ট নিজের স্ত্রীকে দায়িত্ব পালনে অপারগতা দেখিয়ে পদত্যাগ করার পর নজরুল মন্ডল নিজেই সভাপতির দায়িত্বে আসীন হন। এরই মধ্যে পৌর নির্বাচন আসন্ন হলে নজরুল মন্ডল ২০২১ সালে পুনরায় নৌকা প্রতীক নিয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ঠিকাদারদরে নিকট থেকে কমিশন নিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম গুলো হচ্ছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার গোয়ালন্দ কাঁচা বাজারের ইজারায় ১০ লক্ষ টাকার ডাক উঠলেও পৌরসভার ফান্ডে ৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়ে বাঁকী ৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। মহাসড়ক থেকে গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ না করেই সমুদয় বিল তুলে নেন মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডল। পৌর ভবনে মেয়রের জন্য বরাদ্দকৃত অফিস সাজসজ্জার জন্য ৪ লাখ টাকা খরচ করলেও ২২ লক্ষ টাকা বিল উঠিয়ে নেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে সোলার লাইট স্থাপন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিটি লাইটে দাম ৪৫ হাজার টাকা হলেও বিল করা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। পৌরসভায় বসবাসরত হত দরিদ্রদের চিকিৎসার জন্য অনুদান ও অন্যান্য মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ২-৩ হাজার টাকা প্রদান করা হলেও পৌর তহবিল থেকে ৮-১০ গুণ বেশী টাকা উঠিয়ে নেন। এছাড়া পৌরসভার আপ্যায়ন বাবদ ভুয়া বিল ভাউচারে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ৫ কেজি জিলাপী দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠান বাবদ পৌর তহবিল থেকে বিল উঠানো হয় ৬৫ হাজার টাকা। পৌরসভার গরুর হাট ইজারা প্রদানে সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রদান না করে সর্বনিন্ম দরদাতাকে ইজারা প্রদান করেন। এ সব কারণে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ এনে দূর্ণীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ করেন, গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী যুবলীগের ৩নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি মোঃ শহিদ শেখ।
অভিযোগকারী মোঃ শহিদ শেখ বলেন, গত বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সামান্য ৫ কেজি জিলাপী দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করে ৬৫ হাজার টাকা বিল তোলার বিষয়টি জেনে যুবলীগের একজন কর্মী হিসেবে তার মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিয়টি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে উপহাস করার সামিল। কিন্তু মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও এ ধরণের কাজে তার মনে কষ্ঠ ও ক্ষোভ জমে। এ কারণে তিনি অন্যান্য বিষয় খোঁজ নিয়ে দূর্ণীতির
বিষয়টি জানতে পারেন।
তিনি আরোও বলেন, চলতি বছরের প্রথম দিকে মেয়রের দূর্ণীতির বিষয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোন তদন্ত হয়েছে বলে তার জানা নেই। এরপর গত ২৫ মে দূর্ণীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে ডাকযোগে অভিযোগ প্রেরণ করেন। দুদুকের তদন্তে দৃশ্যমান গতির প্রত্যাশায় তিনি গত ২৬ জুন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ৩ মাসের মধ্যে দুর্ণীতি দমণ কমিশন (দুদক) কে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত ২৭ এপ্রিল গোয়ালন্দের মন্ডল ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী নাসিম মাহামুদ ইভান পৌরসভার গরু হাট ইজারা প্রদানে তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও তাকে হাট প্রদান না করায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন রাজবাড়ীর স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ৭৩জন চাকুরী প্রত্যাশী গত ২১জুন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা অভিযোগে বলেন, গত ২৫ এপ্রিল গোয়ালন্দ পৌরসভায় শুন্যপদে ৬টি নিয়োগের ছাড়পত্র স্থানীয় সরকার সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ পেয়েছে। গোয়ালন্দ পৌরসভায় যোগাযোগ করলে তারা কোন তথ্য প্রদান করেনি। অভিযোগকারীরা জানতে পেরেছেন একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে, তবে পত্রিকার নাম বলতে পারেনি। নিয়োগ সংক্রান্ত কোন নোটিশ পৌরসভার নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়নি। এ কারণে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে ব্যাপক দুর্ণীতির আভাস পাওয়ায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
রাজবাড়ীর স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তবে কি পেলেন তা বলতে অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র মোঃ নজরুল ইসলাম মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইলে কোন কথা বলতে রাজি হননি। সরাসরি অফিসে সাক্ষাতের আহবান করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Sorry buddy! You can\'t copy our content :) Content is protected !!