• শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উজানচর জামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা রাজবাড়ীতে বিএনপি’র রোড মার্চ সফল করতে ছাত্রদলের ঘোষণা রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালিত রাজবাড়ী মাটিপাড়া হোণ্ডাকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন দৌলতদিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে মিছিল আ.লীগ নেতা টিপুর উদ্যোগে কালুখালীতে প্রধানমন্ত্রী’র জন্মদিন পালিত দৌলতদিয়া থেকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ ২জন গ্রেপ্তার কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা রাজবাড়ীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত

নিজ চিত্রপটে শিল্পী মনসুর উল করিম নিজেকে বিশ্লেষণ করেছেন

প্রতিবেদকঃ / ৪৫ পোস্ট সময়
সর্বশেষ আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

॥ আশ্রাফ বাবু ॥
সমাজ বিকাশের কালপথে, সভ্যতার বাঁকে বাঁকে মানুষের দুর্গতির স্বরূপ জেনে বুঝে ধারণ করেছেন মাটির মায়া, জন্মের মায়া। এই বিশ^ যাপনে সমাজ ও সভ্যতায় মানুষের বেদনাকৃত অন্তরকোঠার বাস্তবতা সবসময় শিল্পী মনসুর উল করিমের শিল্প সত্তায় স্থান করে নিয়েছে। স্রোতের বিপরীতে সব সময় কিছু মানুষ চলতে পর্যন্ত পারেন উদাসীন মানব হয়ে সাধারণ দৃষ্টির গভীরে। আমি এ ভাবেই একজন শিল্পীর বিবেক নির্মাণ দেখেছি চিত্র সৃষ্টির প্রাণে। শীতের বিকেলে এক বৃষ্টিভেজা বুননে সৃষ্টির কারিগর তার শৈল্পিক চিন্তার প্রখরতা অতিক্রম করেছে জীবন পাঠশালায়। শিল্পী নিজেই প্রকৃতিকে যেভাবে অনুভব করছেন- “আমার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হলো নিভৃতচারিতা, শিক্ষা ও চাকুরি সূত্রে ১৯৭৩ সাল থেকে চট্টগ্রামে আছি। আগে মাঝে মাঝে রাজবাড়ী আসা হতো এখন অবসরের সময় হয়ে গেছে- এখন রাজবাড়ীকে খুব মিস করি। আমার জন্মস্থান, আমার শৈশব, কৈশর, মধ্যযৌবন আমার শেখড়ের প্রতি এক মায়াবী টান অনুভব করি। এখন রাজবাড়ীতে ঘনঘন আসা হচ্ছে। চট্টগ্রামে আমার একটি স্টুডিও আছে। ওখানে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে তৈরী করার চেষ্টা করেছি। আমি যখন স্টুডিওতে ছবি আঁকি তখন ছবি আঁকার সময় সংগীত বাজতে থাকে, সংগীতের মূর্ছনা এক ধরণের আত্মিক শক্তি জোগায়। ঠিক তেমনি ভাবে রাজবাড়ীতে এসেও প্রকৃতির অবাধ ঝর্নাধারা সুর হয়ে অবিরত কানে বাজতে থাকে। তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে কবি খোকন মাহমুদ এর কাছে তার অনুভব প্রকাশ করলেন। দেশের মানুষের আবেগ, অনুভূতি, দুর্দশা, আনন্দ শিল্পী মনসুর উল করিমের দৃষ্টি এড়ায় না। গভীর অনুসন্ধান আত্মবিশ^াসের সঙ্গে ধারণ করেছেন তার চিত্রকর্ম ও সাহিত্যের অনুষঙ্গ করে। সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনশীলতা মানুষের অস্তিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নিয়তির মতো কার্যকারগত অমোঘতা। মানুষ ইচ্ছে করলে পরিকল্পনা মাফিক কেবল পরিবর্তনের গতিমুখ বদলে দিতে পারে, কিন্তু এর পরিবর্তনরীতিকে থামিয়ে দিতে পারে না। বিশ^ প্রকৃতি ও মানুষ প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত ও সম্পর্কিত তুলে ধরেছেন তাঁর শিল্পী চেতনায়। তাঁর চিত্রকর্মে গতিমুখর প্রবণতা ও দুর্গতির স্বরূপ জানা যাবে। সময় ও যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ছবির প্রকৃতি আঙ্গিক এবং প্রকাশের পরিবর্তন ঘটে, বাস্তবতা, অভিজ্ঞতা, বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্তর্নিহিত ভাবের সংমিশ্রন করে ছবি আঁকার চেষ্টা করে থাকি। আমরা যা দেখি তা বাস্তব। এই বাস্তবতা যেভাবে আমাদের মনে উপস্থিত হয় তা নিজস্ব চিন্তার ফসল যার আকার, আকৃতি, গঠন, বর্ণ সবই নিজস্ব গঠনে প্রোথিত থাকে কিন্তু যখন আবার এই গঠনকে ছবির আকারে রূপ দিই তখন তা বাস্তবে রূপ পায়। পটের দ্বিমাত্রিকতা এমন মাত্রা তৈরি করে যা নিজস্ব কাঠামো নিয়ে এক নতুন জগৎ সৃষ্টি করে। এভাবেই আমরা চোখে দেখা বাস্তবের প্রতি প্রভাবিত হই। শিল্পীর সৃজনশীল বোধ থেকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে পরিপূর্ণ শিল্পীরীতির নির্যাসের প্রতি। শুরুতে যে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, শিল্পীর শিল্পকর্ম তার আত্মা, তার সত্তা- হয়তো তিনিই। এই দেশের মাটি, মানুষ, প্রেম সবইতো শৈল্পিক সত্তায় গ্রোক্ষিত। এ সব বাদ দিয়ে তো আমি শিল্পী নই। নিজের সঙ্গে প্রতিটি মুহুর্ত বোঝাপড়া করতে হয়। এই বোঝাপড়ার ভেতর দিয়েই তার সমাজ চিত্র সার্বজনীন হয়ে ওঠে। আমার দেখা শিল্পীর সেই চেষ্টাই পরিলক্ষিত হয়ে স্বল্প সময়ের মেলামেশায়। আমি মুক্ত দৃষ্টির পথিক শ্রোতা হয়ে সমকালের দৃশ্য ধারণ করার চেষ্টা করেছে শিল্পী মনসুর উল করিমের সংস্পর্শে থেকে।
মনসুর উল করিম দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করেন যে- পূর্ব সিদ্ধান্ত বা প্রস্তুতি নিয়ে তিনি শিল্পী হননি। ছবি আঁকার জন্য সৃজনশীল মানসিকতা প্রয়োজন। তবে সৃজনশীলবোধ তৈরি হলে সবসময় কর্ম উদ্যামী শক্তি নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অগ্রসর হয়। হয়তো সেই মানসিকতা তৈরি হয়েছে আমার বোধের ধাক্কা পেয়ে। সেই সাথে কোন কিছু গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোনকিছুর একাত্মতা বা মগ্ন হওয়ার ক্ষমতা স্বতঃস্ফুর্তভাবে ধারণ করার প্রকাশ বৃদ্ধি পায়। এমন ভাবনা আলোকিত ধারণা শিল্প অনুরাগী জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নেবে সেটাই স্বাভাবিক। এই চমৎকার ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে কখন যেন কবিতা লেখার দক্ষতা ধারণ করেছে তিনি নিজেও নির্দিষ্ট করে প্রকাশ করতে পারছেন না। দীর্ঘ চিত্রকর্মের মধ্যেও অতিবাহিত হবার পরেও সাহিত্যের অন্য প্লাটফর্মে আধুনিক ধারায় বিরাজ করছেন সমানভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে। যেভাবে মনসুর উল করিম চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তেমনি কবি হিসেবেও সমানভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন কবিতা লেখনির মধ্য দিয়ে। তার কবিতা ভাবনায় অশেষ ও বিশেষ কয়টা লাইন তুলে ধরলাম-
“ভাঙ্গতে পারি সব আমি
তোমার বক্ষ বিদীর্ণ করে
সমতলে নিয়ে আসতে পারি
তোমার অন্তর চুড়মার করে
বইয়ে দিতে পারি পদ্মা-যমুনা
স্রোতস্মিনীর মতো স্রোতধারা।”
– মনসুর উল করিম
কবি মনসুর উল করিমের প্রবল ভালোবাসার বিষয় চিত্রকলায় উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় এবং একই বিষয়ে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করার পরেও কবিতায় জ্ঞান ছিল তার কবিতায় সুবিস্তৃত। শিল্পী মনসুর উল করিম শিল্প কর্মের সংখ্যা অনেক। কাজও করেছেন বিচিত্র মাধ্যমে। শুদ্ধ শিল্পচর্চা ছিল তার আধুনিক নন্দনবোধ। ছবি আঁকতে যে সমস্যা শিল্পীকে তাড়িত করে সেই সমস্যার উপর ভর করে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। ছবি যে ভাষা, কাঠামো, গঠন, আলোছায়া এবং রং ব্যবহারে ছিল সবসময় নিজস্বতা। তার শিল্পকর্মের প্রকাশ, তার অভিব্যক্তি যা ছিল নিজস্ব গুণে ও সম্পদে ভরপুর। সময় ও যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ছবির প্রকৃতি আঙ্গিক এবং প্রকাশের পরিবর্তন ঘটে। সুন্দর ও সংবেদনশীল চিন্তা-ভাবনা একজন সৃজনশীল ব্যক্তির মধ্যে সবসময়ই থাকে, ফলে তার পক্ষে সব সম্ভব হয় পরিবেশ থেকে নানা ধরণের নানা বিষয়ে শিল্পের উপাদান সংগ্রহ করা। উপাদান সংগ্রহের ফলে শিল্পী তার শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে শিল্পের দক্ষতা, প্রকরণের ক্ষমতা, চিন্তাধারার উৎকর্ষতা এবং শিল্পের নির্যাস যা আয়ত্ব করেছিলেন তার শিল্পকর্মের দিকে তাকালে আলো-আঁধারের খেলা সুন্দরভাবে বোঝা যায়। শিল্পীর ভুবনে নিজ চিত্রপটে যেমন শিল্পী মনসুর উল করিম নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করে বিশ্লেষণ করছেন। শান্ত, ধীর মানুষটা নিজের অবচেতনের অশান্ত দ্রোহের আগুনকে দীর্ঘ অবয়বের অভিব্যক্তিতে তুলে আনছেন ক্যানভাসে। শিল্পীর কিছু কাজে আলোছায়ায় নন্দিত রূপ প্রত্যক্ষ করেছি। দেখায়, আঁকায় তিনি বরাবর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষক।
শিল্পচর্চার অভিজ্ঞতা ও আত্মোপলব্ধি প্রত্যক্ষে আদিরূপ মানুষ ঢেকে রাখে তার শিক্ষা ও সংস্কৃতি বোধ দিয়ে। ফাঁক পেলেই মানুষের এই অশুভ চেহারা বিকটাকার ধারণ করতে পারে- শিল্পী সে-ইঙ্গিত রেখেছেন তাঁর চিত্রকর্মে। মানুষের সুন্দর ইচ্ছা নষ্ট করে দেয় নিজের পৃথিবী নিয়ে জনৈকের ব্যস্ততা। লেখক ঃ আশ্রাফ বাবু, কবি ও প্রাবন্ধিক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Sorry buddy! You can\'t copy our content :) Content is protected !!