• শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
উজানচর জামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা রাজবাড়ীতে বিএনপি’র রোড মার্চ সফল করতে ছাত্রদলের ঘোষণা রাজবাড়ীতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) পালিত রাজবাড়ী মাটিপাড়া হোণ্ডাকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন দৌলতদিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে মিছিল আ.লীগ নেতা টিপুর উদ্যোগে কালুখালীতে প্রধানমন্ত্রী’র জন্মদিন পালিত দৌলতদিয়া থেকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ ২জন গ্রেপ্তার কালুখালীর বোয়ালিয়া ইউনিয়ন আ. লীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত রামকান্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা রাজবাড়ীতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত

জিপিএ-৫ পেয়েও দুঃচিন্তায় গোয়ালন্দের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী আসিফ

প্রতিবেদকঃ / ৫৫ পোস্ট সময়
সর্বশেষ আপডেট বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

জহুরুল ইসলাম হালিম : এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও দুঃচিন্তায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী আসিফ। তিন বছর আগে পদ্মার প্রবল ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয় আসিফদের। তখন সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সবকিছু হারিয়ে অন্য আট-দশটা ছেলের মতো ওখানেই থেমে যেতে পারত তার লেখাপড়া। জীবনের তাগিদে বাবার সাথে নেমে যেতে পারত ঘাটের হকারী পেশায়। কিন্তু সে তা করেনি। এক মূহুর্তের জন্যও সে মনোবল হারায়নি। চালিয়ে গেছে এক কঠিন সংগ্রাম। যার ফল স্বরুপ সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অদম্য মেধাবী ও বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী আসিফের এ সাফল্য প্রত্যাশিতই ছিল। তারপরও তার সাফল্যে পরিবার ও শিক্ষকরা খুব খুশি। আসিফ প্রামনিক ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপারচক গ্রামে বসবাস করেন। গ্রামের জনৈক আলাউদ্দিন সরদারের কাছ থেকে বার্ষিক ৪ হাজার টাকায় লিজে নেয়া ৪ শতাংশ জমিতে তাদের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। নদীতে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার আগে উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের লালু মণ্ডলের পাড়ায় তাদের বসতি ছিল। আসিফের বাবা বাদশা প্রামানিক দৌলতদিয়া ঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। চারটি ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার ছয় সদস্যের সংসার। আসিফ তার বড় সন্তান। তার সামান্য আয়ে সংসার চলে টানাপোড়েনের মধ্যে। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পড়াশোনা সামলে আসিফ টিউশনি করে পরিবারকে কিছুটা সহযোগিতা করে। সরেজমিন আসিফদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি টিনের ছাপরা। ঘরের এক পাশে থাকে আসিফ, আরেক পাশে দুই ভাইবোনকে নিয়ে থাকেন তাঁর মা-বাবা। আসিফের মা আসমা বেগমের চোখে আনন্দাশ্রু। তিনি বলেন, পরিবারের সবার বড় আসিফ। এরপর মেয়ে দীপা। সে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের কারণে সে দৌলতদিয়ার মুন্সিবাজারে নানাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। আরেক মেয়ে দিয়া প্রথম শ্রেণিতে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সবার ছোট ছেলে আহাদের বয়স আড়াই বছর। আসমা বেগম বলেন, এত কষ্টের মধ্যেও ছেলে ভালভাবে পাশ করেছে দেখে খুব খুশি হয়েছি। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, পরীক্ষার আগে আসিফ অনেক কষ্ট করে দিনরাত পড়ালেখা করেছে। অথচ আমি তাকে একটু ভালো খাবারও দিতে পারিনি। অথচ তিনবছর আগেও আমাদের জমিজমা,বাড়িঘর সবই ছিল। নদীভাঙনে সব হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব। আমার ভাঙা সংসারে ছেলে আসিফই এখন আশার আলো। আসিফের বাবা বাদশা প্রামানিক বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন লঞ্চ-ফেরি এবং ঘাট এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলত সংসার। কিন্তু এখন এদিকে যাত্রী ও যানবাহন কমে যাওয়ায় বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে। তারপর হকার বেশী হওয়ায় তিন দিন পর এক দিন বিক্রির সুযোগ পান। দিন শেষে ৩০০-৪০০ টাকার মতো থাকে। তা দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছেন। এমতাবস্থায় আসিফ পরিক্ষায় ভাল ফলাফল করল। এতে আমি একদিকে খুব খুশি। আবার তার পরবর্তী পড়ালেখা কিভাবে চালাবো তা নিয়েও অনেক দুঃচিন্তায় আছি। আসিফ জানায়, “আমি যে কোন কষ্ট সইতে প্রস্তুত আছি। তবুও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হব। দেশের মানুষকে সেবা করব।” দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, আসিফ অদম্য মেধাবী একটা ছেলে। পড়ালেখা ছাড়াও বিতর্ক, কুইজ, সাধারন জ্ঞান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। এ জন্য জেলা-উপজেলার বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে সে বহু পুরস্কারও অর্জন করেছে। আমরা বিগত ৫ বছর তাকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগীতা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সে আমাদেরকে গর্বিত করেছে। আমি তার মতো মেধাবীর পাশে দাঁড়াতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Sorry buddy! You can\'t copy our content :) Content is protected !!