স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীতে পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। গত এক সপ্তাহের পদ্মা নদীতে বিলিন হয়েছে অন্তত ১০০ বিঘা ফসলী জমি। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ সড়ক, ব্রীজ, বসতবাড়িসহ বহু স্থাপনা। নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করাসহ ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
সোমবার সকাল ১১টায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর পদ্মা নদীর তীতে ভাঙ্গন স্থানে এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কোরবান আলীর সভাপতিত্বে এলাকার কয়েকশত নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, আব্দুল মান্নান মোল্যা, নজর মওলা, রিনা পারভীন, খাদিজা বেগম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর, বেনিনগর ও কালিতলা এলাকা তিনটি থেকে কয়েকশত গজ দুরেই আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে মুুহুর্তেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ফসলী জমি। একের পর এক মাটির চাপ ভেঙ্গে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। হতাশদৃষ্টিতে পদ্মার দিকে অপলকদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তারা। গত এক সপ্তাহ যাবৎ কমছে পদ্মা নদীর পানি। আর পানি কমার সাথে সাথে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে । ভাঙ্গনের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এ এলাকার অন্তত ১০০ বিঘা ফসলী জমি। অনেক ফসলের ক্ষেতে পটল, ভেন্ডি, ধুনদুলসহ বিভিন্ন সবজির চাষ রয়েছে, সেই সবজিসহ নদীতে চলে যাচ্ছে।
তারা বলেন, ফসলী জমির পর এখন মারাত্বক ঝুঁকিতে পড়েছে মহাদেবপুর, বেনিনগর ও কালিতলা গ্রামের শতশত বসতবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক, ব্রীজ, মহাদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিলিমপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বড় ধরনের বিপদ আসতে যাচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে অবৈধ ভাবে প্রতিনিয়ত বালি উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নিঃস্ব হচ্ছেন তারা। যেভাবে ভাঙ্গছে এতে বসতবাড়ি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদের। যে কারণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি। নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে এখনও কাজ শুরু হয়নি। তারা প্রশাসনের নিকট অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন বন্ধের দাবী জানান।
না খেয়ে মরার চেয়ে এহন আমার মইরা যাওয়াই ভালো। এর আগে পদ্মায় দুই বার বসত বাড়ি নিয়ে গেছে। অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। ছেলে নাতী নাতনী নিয়ে কোন রহমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করি। মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে শেষ সম্বল দুই একর জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম স্বপ্ন ছিলো খেয়ে পরে বেচে থাকবো। পদ্মার পেটে যাচ্ছে তাও। তাই কাচা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছি। কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী কৃষক জসিম মোল্লা।
এ সময় চরনারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, এক শ্রেনীর অসাধু মানুষের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে থামছে না ভাঙ্গন। অবৈধভাবে বালু বন্ধে প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, আমার যা ছিলো সব ভেঙ্গে পদ্মায় গেছে। বসত ভিটা ছাড়া আর কিছু নাই। কার কাছে বলবো, কার কাছে যাবো বুঝে উঠতে পারছি না। আমার টুকু গেছে যাক প্রতিবেশির টুকু রক্ষা করার দাবি নিয়ে মানববন্ধনের এসেছি।
আলেয়া বেগম নামে এক নারী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে এই এলাকায় কোন কাজই করেনি। আশে পাশে কাজ করলেও তা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। কোন রকমে একখান করে বস্তা ফেলে চলে গেছে।
চর নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্র রাজনীতির সাথে জরিত থাকায় প্রতিদিন গ্রামের লোকজন নদী ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে বাড়িতে আসে। এ ব্যপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাছে বলাহলে তিনিও আন্তরিকতার সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। দ্রুত সময়ে এই এলাকায় ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু করার জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা, হড়াই ও গড়াইসহ ৮৫ কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে। যেখানেই ভাঙ্গন দেখা দেয় গুরুত্বভেদে ব্যবস্থা নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। যে সকল স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ওই সকল স্থানে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।