সোহেল রানা : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বসতবাড়ী থেকে চুরি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২ চোর মোঃ রিফাত মন্ডল (২০) ও আলমগীর ওরফে মাতাল আলমগীর (২০) রবিবার বিকেলে রাজবাড়ী ৪নং আমলী আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মৌসুমী সাহার নিকট ফৌ.কা.বি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, আলমগীর, আল-আমিন, মিন্টু, সুমন, নয়ন ও মোঃ রিফাত মন্ডল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বালিয়াকান্দি থানার এসআই মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বহরপুর সত্যরঞ্জনের বাড়ীতে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে চুরি হয়। এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামানের সহযোগিতায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৬ চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় নগদ ১১ হাজার ২শত টাকা, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি আংটি ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। রবিবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া কাউন্নাইর গ্রামের মোঃ কামাল মন্ডলের ছেলে মোঃ রিফাত মন্ডল ফৌ. কা. বি. ১৬১ ধারা মোতাবেক আদালতে জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৮ টার সময় মাতাল আলমগীর তার ফোন দিয়ে বহরপুর রেলের মাঠে আসতে বলে। বলে যে, একটা ধান্ধা আছে। সে তখন রাজবাড়ী রামকান্তপুর আমার ভাড়া বাসায় ছিল। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে বহরপুর রেলের মাঠে যায়। সেখানে যেয়ে বারমল্লিকার মাতাল আলমগীর, আল আমিন, মিন্টু, কাউন্নাইর গ্রামের তারো, নওপাড়ার সুমন, বারমল্লিকার নয়ন, রসুলপুরের রাকিবকে দেখে। সেখানে সবাই মিলে পরিকল্পনা করে কিভাবে কাজটা করা যায়। কাজটা হলো বহরপুর মন্দির পার হয়ে বামে ইটের রাস্তায় এক বাড়িতে চুরি করার। রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটায় ওই বাড়িতে যায়। চার সাইডে ভাল করে দেখে নয়ন, রাকিব, মিন্টু, সুমনদেরকে দাড় করে পাহারায় রাখে। সে, আল-আমিন, আলমগীর আর তারো এ কয়জনে ভিতরে ঢোকে। বাসার দরজা এক সাইডে টান দিয়ে খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকে একটি বাটন ফোন, স্বর্নের কানের দুল-১ জোড়া, একটি স্বর্নের চেইন, একটি আংটি, নগদ কিছু টাকা নিয়ে চলে আসে। তারা সবাই দড়িপাড়া মাঠে গিয়ে ভাগ করে নেয়। সে আর তারো কানের দুল আর আংটি নেয়, চেইন এবং টাকা নিয়ে আলমগীর আর আল-আমিন সহ বাকিরা চলে যায়। সে আর তারো, তারোর বউরে সাথে নিয়ে আলাদিপুর অসিমের সোনার দোকানে গিয়ে ২৯ হাজার ৫০০ টাকায় কানের দুল আর আংটি বিক্রি করে। সে ১৫ হাজার টাকা নেয়, বাঁকী টাকা তারো নেয়। অনুমান ৮ দিন পরে আলমগীর তারে আরো ১২ হাজার টাকা দেয়। পরে তাকে সাথে নিয়ে পুলিশ অভিযান করে আলমগীর, আল-আমিন, মিন্টু, সুমন, নয়ন দেরকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তার দেওয়া তথ্য মতে গত শনিবার রাতে অসিমের স্বর্নের দোকানে যায়। অসিম সেই স্বর্ন রাজবাড়ী তপনের দোকানে বিক্রি করে ফেলে। পুলিশ তাকে সাথে নিয়ে তপনের সোনার দোকান থেকে সেই স্বর্ন উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, অপর আসামী উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বারমল্লিকা গ্রামের মৃত আবুল মোল্যার ছেলে আলমগীর ওরফে মাতাল আলমগীর ফৌ.কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকাল আনুমানিক ৫ টার সময় রিফাত তাকে ফোন দেয়। তখন সে বাড়ীতে ছিল। রিফাত রাজবাড়ীতে ছিল। ফোন দিয়ে বলে একটা কাজের বিষয়ে কথা বলব, মোটা অংকের টাকা এবং গয়না পাওয়া যাবেনে। পরে বল্লাম যে, রামদিয়া এসে দেহা করো। এ দিনই রাত আনুমানিক সাড়ে ৭ টার দিকে রিফাত, সুমন,তারো, রাকিব এরা রামদিয়া বাজারে সুমনের বাড়ীর পাশে তার সাথে দেখা করে। সেখানেই কাজের পরিকল্পনা করি। রিফাত এবং রসুলপুরের রাকিব ২ টি মোটর সাইকেল নিয়ে আসে। রাত আনুমানিক ১০ টা সাড়ে ১০ টার মধ্যে ওই বাড়ির পাশে যেয়ে রেকি করে আমরা বহরপুর রেল মাঠে যাই। আমরা মোটর সাইকেল পাঠিয়ে দিয়ে নয়ন, আল-আমিন আর মিন্টুরে রেল মাঠে নিয়ে আসি। সবাই মিলে পরিকল্পনা করি। সুমন রাজমিস্ত্রী কাজ করে সে জানালা এবং দরজা খোলার জন্য একটি পুড়াবালি লোহার রডের হ্যান্ডেল নিয়ে আসে। রাত আনুমানিক রাত ১২ টার পরে আমরা সকলে সেখানে যাই। রাকিব এবং মিন্টু হোন্ডা নিয়ে বাড়ির পাশে চক্কর দেয়, রাস্তায় দাড়িয়ে পাহারা দেয় নয়ন আর সুমন। সে রিফাত, আল-আমিন আর তারো পোড়াবালি হ্যান্ডেল দিয়ে জানালার রড বাকা করে ঢুকার চেষ্টা করে। জানালা দিয়ে ঢুকতে না পেরে পরবর্তীতে সে আর রিফাত চাপ দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে। ওই বাড়ী থেকে হ্যান্ডেল দিয়ে চাপ দিয়ে আলমারি খুলে নগদ ৬০-৭০ হাজার টাকা, কানের দুল, আংটি আর চেইন, একটা বাটন ফোন নিই। বহরপুর রেল মাঠের পাশে যাইয়া ভাগ বাটোয়ারা করে নিই। রিফাত আর তারো, রাকিব কানের দুল আর আংটি নেয়, চেইন নেয় আল-আমিন ভাই, টাকা রিফাতকে দিই ১০ হাজার টাকা , আল-আমিন নেয় ২ হাজার টাকা, মিন্টু নেয় ৮ হাজার টাকা, রাকিব নেয় ৫ হাজার টাকা, সুমনরে দিই ১০ হাজার টাকা, নয়ন নেয় ৫ হাজার টাকা, তার নিজের কাছে ১২ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকে। এরপরে আমরা যে যার মত চলে যাই। আল-আমিন চেইন বেঁচে লাঙ্গলবাধ বাজারে। তারোর কাছে শুনি যে, কানের দুল আর আংটি তারা রাজবাড়িতে বিক্রি করেছে। পুলিশ রিফাত এর মাধ্যমে তাকে আল-আমিন, মিন্টু, নয়ন, সুমনকে আটক করে।